skip to main |
skip to sidebar
মানজার রানা থাকছেনই!
মেলবোর্নে বসে কী আজ মানজার রানাকে মনে পড়ছে মাশরাফি বিন মুর্তজার? প্রিয়
বন্ধুর মৃত্যু দিনে মাশরাফির তাঁর কথা মনে পড়বে না, এটা মেনে নেওয়া বোধ হয়
একটু কষ্টকরই। বিশ্বকাপে পরের ম্যাচটা ভারতের সঙ্গে বলেই হয়তো রানার কথা
আজ আরও বেশি করে মনে পড়ছে মাশরাফির। এই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের প্রয়াত
অলরাউন্ডারের কী যেন একটা সম্পর্ক আছে! নয়তো তাঁর মৃত্যুর মাসেই কেন
বারবার ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ!
‘কী যেন একটা
সম্পর্ক...’—এটা কথার কথা! বলতে হয় বলেই বলা। কিন্তু আসল ব্যাপারটা তো
ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রেরই বুঝে যাওয়ার কথা। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ
ভারতকে হারিয়েছিল রানার দুঃসহ মৃত্যু–সংবাদকে সঙ্গী করেই, তাঁর মৃত্যুর ঠিক
দুদিন পরে। ২০১২ সালে এশিয়া কাপে ভারত যেদিন বাংলাদেশের কাছে আবারও হারল,
সেই দিনটা ছিল রানার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। আজ ২০১৫ সালে রানার অষ্টম
মৃত্যুবার্ষিকী যখন পার হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন বাংলাদেশ অপেক্ষায় আছে আরও
একটি ভারত-মহারণের। ভারতের সঙ্গে এটি রানার বিশেষ কোনো যোগ নয়তো কী!
২০০৭
বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেওয়ার
সময়ই গোটা বাংলাদেশ শিবির বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল দেশ থেকে আসা ভয়াবহ এক
দুঃসংবাদে। টিমমেট-বন্ধু মানজারুল ইসলাম রানা প্রাণ হারিয়েছেন এক
মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়। প্রিয়জন হারানোর বেদনা বুকে চেপে রেখেই পোর্ট
অব স্পেনে দল খেলেছিল। আজও বাংলাদেশ দলের অনেকেই মনে করেন এবং অন্তর দিয়েই
বিশ্বাস করেন, সেদিন পোর্ট অব স্পেনে প্রতিটি খেলোয়াড়ের ছায়াসঙ্গী হয়ে
নাকি মানজার রানা ছিলেন। বিজ্ঞানমনস্করা এই কথায় বিরক্ত হতে পারেন, তা হোন
তাঁরা। কিন্তু বিশ্বাস কিংবা আবেগের সঙ্গে তো আর জোর খাটে না। যুক্তিও
যে অনেক ক্ষেত্রেই আবেগের কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত।
আজ থেকে আট
বছর আগে ঠিক এ দিনেই খুলনার ডুমুরিয়ায় মোটর বাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন
দেশের হয়ে ২৫টি ওয়ানডে ও ছয়টি টেস্ট খেলা এই ক্রিকেটার। ৪৬টি প্রথম শ্রেণির
ম্যাচের অভিজ্ঞতা ঝুলিতে নিয়ে মৃত্যুর সময় রানা ছিলেন এদেশের অন্যতম
প্রতিশ্রুতিবান ক্রিকেটার। সেদিন ডুমুরিয়ার সড়ক দুর্ঘটনায় রানার সঙ্গে নিহত
হয়েছিলেন বাংলাদেশের আরেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার সাজ্জাতুল হাসান সেতু।
খুলনা বিভাগীয় দলের টিমমেটকে সঙ্গে নিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন রানা
প্রিয় খাদ্যের সন্ধানে। কিন্তু তাঁর জীবনপ্রদীপ সেদিন থামিয়ে দিয়েছিল
দ্রুতগতির ট্রাক। রানার মনটাও তখন ভালো ছিল না। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ
পড়েছেন। দুদিন বাদেই ব্রায়ান লারার দেশে বাংলাদেশের খেলা। যে দলের ড্রেসিং
রুমে ২০০৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কাটিয়েছেন আনন্দময় কিছু সময়। সেই দল, সেই
টিমমেটরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে, তিনি দেশে বসে খেলছেন প্রথম শ্রেণির ম্যাচ!
মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে কি এই কথাগুলোই মনে হচ্ছিল রানার? এত অসাবধান
সেদিন কীভাবে হলেন রানা? তিনি তো এমন অসাবধানী কেউ ছিলেন না!
রানার
মৃত্যুর ঠিক দুদিন পরই ভারতের সঙ্গে ম্যাচটিতে বুকে পাথর বেঁধে খেলে জয়ী
হয়েছিল বাংলাদেশ। রানার বন্ধু মাশরাফি বিন মুর্তজা অনেক জায়গায়ই বলেছেন,
‘কেন যেন মনে হচ্ছিল “রানা” মাঠেই আমাদের সবার সঙ্গে রয়েছে।’ সে দলের
অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের মনে পড়ছিল একটি কথাই। দেশ ছাড়ার আগে রানার একটি
অনুরোধ, ‘সুমন ভাই, একটা বড় দলকে হারাতেই হবে।’
খেলোয়াড় হিসেবে
খুব তথাকথিত ‘গ্ল্যামারাস’ ছিলেন না। বলে-ব্যাটেও অসাধারণ প্রতিভাবান
ক্রিকেটার তাঁকে বলা যাবে না। কিন্তু মৃত্যুর পর ওই রানাই যে এমন অসাধারণ
হয়ে উঠবেন—এ কথা কেউ কি ভেবেছিল? ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে হাবিবুল বাশারকে
বলেছিলেন, একটা বড় দলকে হারাতেই হবে। বেঁচে থাকলে এখন হয়তো থাকতেন দলের
অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড়। কোয়ার্টার ফাইনালের আগুন লড়াইয়ের আগে তিনি
সতীর্থদের কী বলতেন?
মাশরাফি হয়তো আজ মেলবোর্নে বসে কল্পনায় সেই কথাগুলোই সাজিয়ে চলেছেন!
0 comments:
Post a Comment